আবিষ্কারের ঘটনা:
শুরুটা বেদুইন যুবকদের হাত ধরে:
- ১৯৪৭ সালে কুমরান (Qumran) অঞ্চলের ডেড সি (মৃত সাগর) সংলগ্ন একটি গুহায় একদল বেদুইন রাখাল ছাগল ও ভেড়া চড়ানোর সময় প্রথম স্ক্রোলটি আবিষ্কার করে।
- বেদুইন যুবক মোহাম্মদ আদ-দিব একটি গুহায় ঢিল ছুঁড়ে খেলার সময় একটি কাদামাটির পাত্র ভাঙার শব্দ পান।
- কৌতূহলবশত গুহার ভেতরে ঢুকে তিনি প্রাচীন স্ক্রোলের কিছু খণ্ড খুঁজে পান, যা পাত্রের ভেতরে সংরক্ষিত ছিল।
প্রথম স্ক্রোল:
- প্রথম আবিষ্কৃত স্ক্রোলগুলো মূলত চামড়ার (পার্চমেন্ট) তৈরি ছিল।
- এগুলো ভালোভাবে সংরক্ষণের জন্য মাটির পাত্রে রাখা ছিল, যা তাদের বহু শতাব্দী ধরে রক্ষা করতে সাহায্য করেছে।
প্রাথমিক তদন্ত:
- বেদুইনরা এই স্ক্রোলগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করার চেষ্টা করে।
- কিছু স্ক্রোল জেরুজালেমের একজন প্রাচীন জিনিসপত্র ব্যবসায়ীর কাছে পৌঁছায়।
- ধর্মীয় ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞরা এগুলো পরীক্ষা করে প্রাচীন এবং অমূল্য ধর্মীয় টেক্সট হিসেবে শনাক্ত করেন।
গুহাগুলোর বিস্তৃত অনুসন্ধান:
- ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৬ সালের মধ্যে প্রত্নতাত্ত্বিক এবং গবেষকরা কুমরানের ১১টি গুহায় অনুসন্ধান চালান।
- এসব গুহা থেকে মোট ৯৭০টিরও বেশি ডকুমেন্ট বা স্ক্রোল উদ্ধার করা হয়।
- এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের পাণ্ডুলিপি, ধর্মীয় আইন, এবং গুহার জীবন সম্পর্কে তথ্য।
গুরুত্বপূর্ণ গুহা:
- গুহা ১: প্রথম গুহায় "ইসাইয়া স্ক্রোল" (Isaiah Scroll), "হ্যাবাকুক পেশার" (Habakkuk Pesher), এবং "হ্যামানুয়েল ম্যানুয়াল" (Manual of Discipline) পাওয়া যায়।
- গুহা ৪: এখানে সবচেয়ে বেশি স্ক্রোল পাওয়া যায়, যার মধ্যে রয়েছে বহু খণ্ড এবং টুকরো।
- কপার স্ক্রোল (Copper Scroll) হলো অল্ড সি স্ক্রোলের একটি বিশেষ এবং রহস্যময় অংশ, যা অন্যান্য স্ক্রোল থেকে ভিন্ন। এটি চামড়া বা প্যাপিরাসে লেখা নয়, বরং কপার ধাতুতে খোদাই করা। এই স্ক্রোলটি মূলত গুপ্তধনের তালিকা এবং সেগুলোর অবস্থান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ধারণ করে বলে মনে করা হয়। এটি ১৯৫২ সালে কুমরানের গুহা ৩ থেকে আবিষ্কৃত হয়।
কপার স্ক্রোলের বৈশিষ্ট্য:
উপাদান:
- এটি কপার এবং সামান্য পরিমাণে টিনের মিশ্রণে তৈরি।
- এটি খোদাই করা স্ক্রোল, যা পৃষ্ঠে লেখা তথ্যকে টেকসই এবং স্থায়ী করেছে।
আবিষ্কার:
- ১৯৫২ সালে ডেড সি (মৃত সাগর) সংলগ্ন কুমরান অঞ্চলের গুহা ৩ (Cave 3) থেকে এটি আবিষ্কৃত হয়।
- এটি দুটি আলাদা অংশে বিভক্ত ছিল এবং মাটির পাত্রে সংরক্ষিত ছিল।
লেখার ভাষা:
- এটি প্রাচীন হিব্রু ভাষায় লেখা।
- লেখার স্টাইল এবং ভাষার ধরন ইঙ্গিত দেয় যে এটি অন্যান্য স্ক্রোলের তুলনায় কিছুটা ভিন্ন এবং সম্ভবত কোনো দক্ষ কারিগরের দ্বারা তৈরি।
বিষয়বস্তু:
- কপার স্ক্রোলের মূল বিষয়বস্তু হলো একটি গুপ্তধনের তালিকা, যেখানে বিভিন্ন স্থানে লুকানো সম্পদের (স্বর্ণ, রূপা, মূল্যবান জিনিসপত্র) বর্ণনা এবং অবস্থান দেওয়া হয়েছে।
- এতে প্রায় ৬৪টি স্থানের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে মূল্যবান সম্পদ লুকিয়ে রাখা হয়েছে বলে দাবি করা হয়।
- উদাহরণস্বরূপ, একটি অংশে উল্লেখ রয়েছে, “একটি নির্দিষ্ট স্থানে ১৭ ট্যালেন্ট (প্রাচীন ওজন পরিমাপ পদ্ধতি) স্বর্ণ লুকানো আছে।”
স্ক্রোলের উদ্দেশ্য:
- এটি অন্য ধর্মীয় স্ক্রোলের মতো নয়, বরং একটি লজিস্টিক বা অর্থনৈতিক ডকুমেন্ট বলে মনে করা হয়।
- এটি সম্ভবত ইহুদি বিদ্রোহ বা দ্বিতীয় মন্দিরের সময়কালীন সম্পদ লুকানোর তথ্য ধারণ করে।
কপার স্ক্রোলের পুনরুদ্ধার:
- স্ক্রোলটি খুব শক্ত এবং খারাপ অবস্থায় ছিল, যা খোলার প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত জটিল করে তোলে।
- ১৯৫৫ সালে জর্ডানের আম্মানে একটি বিশেষ পদ্ধতি ব্যবহার করে স্ক্রোলটি ধীরে ধীরে কাটা হয়, যাতে অভ্যন্তরের লেখা সংরক্ষণ করা যায়।
গুপ্তধনের রহস্য:
- কপার স্ক্রোলে বর্ণিত গুপ্তধনের অবস্থান সম্পর্কে অনেক তত্ত্ব রয়েছে।
- এখনো পর্যন্ত স্ক্রোলে বর্ণিত সম্পদের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
- গবেষকরা মনে করেন, এগুলো হয়তো রোমানদের আক্রমণের সময় লুকানো ইহুদি মন্দিরের ধনসম্পদ হতে পারে।
গবেষণা এবং গুরুত্ব:
- ইতিহাসের জানালা:
- এটি ইহুদি মন্দির এবং সেই সময়ের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে ধারণা দেয়।
- রহস্যময়তা:
- কপার স্ক্রোলের সাথে সংশ্লিষ্ট রহস্য এটিকে বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণীয় প্রত্নতাত্ত্বিক বস্তুতে পরিণত করেছে।
- ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক সংযোগ:
- এটি দ্বিতীয় মন্দির যুগের ইহুদি সমাজ এবং তাদের সম্পদ রক্ষার প্রচেষ্টা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করে।
স্ক্রোলগুলোর অবস্থান এবং সংরক্ষণ:
- আবিষ্কৃত স্ক্রোলগুলো অনেক ক্ষেত্রে খারাপ অবস্থায় ছিল।
- এগুলো বর্তমানে ইসরায়েলের জাদুঘর এবং গবেষণা কেন্দ্রে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
- কিছু স্ক্রোল অনলাইনেও প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে গবেষকরা আরও বিশদভাবে এগুলো অধ্যয়ন করতে পারেন।
আবিষ্কারের গুরুত্ব:
- ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক মূল্য:স্ক্রোলগুলো বাইবেলের প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপি সরবরাহ করে, যা বাইবেলের ইতিহাস এবং বিকাশ সম্পর্কে নতুন ধারণা দেয়।
- ভাষাতাত্ত্বিক মূল্য:এগুলো হিব্রু ভাষার প্রাচীন রূপ এবং তার পরিবর্তন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়।
- প্রত্নতাত্ত্বিক মূল্য:প্রাচীন ইহুদি সমাজের জীবনধারা, বিশ্বাস, এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে গবেষণার জন্য এটি এক অনন্য উৎস।
ডেড সি স্ক্রোল থেকে পাওয়া বাইবেলের তথ্য বিশ্ব ধর্মীয় ইতিহাস ও গবেষণার ক্ষেত্রে অসাধারণ গুরুত্ব বহন করে। এই স্ক্রোলগুলো মূলত ইহুদি ধর্মীয় পাণ্ডুলিপি, যা বাইবেলের পুরাতন নিয়মের (Old Testament) প্রাচীনতম কপি হিসেবে বিবেচিত। এটি বাইবেলীয় গ্রন্থের ইতিহাস, পাঠভেদ, এবং ঐতিহাসিক নির্ভুলতা সম্পর্কে অমূল্য তথ্য প্রদান করে।
বাইবেলের সম্পর্কিত তথ্যের সারাংশ:
পুরাতন নিয়মের (Old Testament) পাণ্ডুলিপি:
- ডেড সি স্ক্রোল থেকে বাইবেলের পুরাতন নিয়মের ৩৮টির মধ্যে ৩৭টি বইয়ের টেক্সট পাওয়া গেছে।
- স্ক্রোলগুলোর মধ্যে বাইবেলের "ইসাইয়া" (Isaiah), "হ্যাবাকুক" (Habakkuk), "গীতসংহিতা" (Psalms), এবং "দ্বিতীয় বিবরণ" (Deuteronomy) বইয়ের প্রাচীনতম কপি রয়েছে।
ইসাইয়া স্ক্রোল (Great Isaiah Scroll):
- এটি ইসাইয়া বইয়ের সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি, যা খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকের।
- এটি প্রমাণ করে যে বাইবেলীয় টেক্সট কয়েক হাজার বছর ধরে কতটা সঠিকভাবে সংরক্ষিত হয়েছে।
হ্যাবাকুক পেশার (Habakkuk Pesher):
- এটি হ্যাবাকুক বইয়ের ব্যাখ্যামূলক পাণ্ডুলিপি, যা প্রাচীন ইহুদিদের ধর্মীয় ভাবনা এবং তাদের বাইবেল চর্চার একটি দৃষ্টান্ত।
গীতসংহিতা (Psalms):
- স্ক্রোলগুলোতে গীতসংহিতার অনেক গানের উল্লেখ রয়েছে।
- এটি দেখায় যে ইহুদিরা তাদের ধর্মীয় উপাসনার জন্য কীভাবে গীতসংহিতা ব্যবহার করত।
দ্বিতীয় বিবরণ (Deuteronomy):
- এই বইয়ে ইহুদি আইনের মূলনীতি এবং সামাজিক নিয়মের বিস্তারিত উল্লেখ রয়েছে।
- স্ক্রোলগুলোতে দশটি আদেশের (Ten Commandments) বেশ কিছু পাঠভেদ পাওয়া গেছে।
পাঠভেদ ও পাঠভিত্তিক বৈচিত্র্য:
বাইবেলের পাঠভেদ:
- স্ক্রোলগুলোতে বাইবেলের টেক্সটের ছোটখাটো পাঠভেদ লক্ষ্য করা যায়।
- এই পাঠভেদগুলো বাইবেলীয় গ্রন্থের বিকাশ এবং সংরক্ষণে মানবীয় ভূমিকা বোঝায়।
মাসোরেটিক টেক্সট ও সেপচুয়াজিন্ট:
- ডেড সি স্ক্রোলের কিছু পাঠভেদ মাসোরেটিক টেক্সটের (Hebrew Bible) সাথে মিলে যায়, যা আজকের ইহুদি বাইবেলের ভিত্তি।
- অন্য কিছু পাঠভেদ সেপচুয়াজিন্টের (Greek Old Testament) সাথে মিলে যায়।
ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক গুরুত্ব:
বাইবেলের অখণ্ডতা প্রমাণ:
- স্ক্রোলগুলো বাইবেলের মূল টেক্সটের দীর্ঘকালীন অখণ্ডতার প্রমাণ দেয়।
- বিশেষ করে ইসাইয়া স্ক্রোলে বর্তমানে ব্যবহৃত ইসাইয়া বইয়ের টেক্সটের সাথে সামঞ্জস্য লক্ষ্য করা যায়।
ইহুদি বিশ্বাস ও প্রথা:
- স্ক্রোলগুলো প্রাচীন ইহুদি ধর্মীয় বিশ্বাস, প্রথা, এবং তাদের বাইবেল চর্চার পদ্ধতি সম্পর্কে অন্তর্দৃষ্টি দেয়।
মেসিয়ানিক ধারণা:
- স্ক্রোলগুলোর অনেক টেক্সটে মেসিয়াহ সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী এবং তার আগমনের প্রত্যাশা উল্লেখ রয়েছে।
THE BOOK OF ENOCH
এনকের বই" (যা "ইথিওপিয়ান এনক" নামেও পরিচিত) প্রাচীনকালে ইহুদি এবং খ্রিস্টানদের মধ্যে সম্মানিত ছিল। তবে, পরবর্তীতে এটি কিছু প্রভাবশালী ধর্মতত্ত্ববিদের কাছে অস্বীকৃত হয়ে পড়ে, বিশেষ করে এর মধ্যে থাকা বিতর্কিত বক্তব্যের কারণে।
এই বইয়ে "পতিত ফেরেশতাদের" (ফলেন অ্যাঞ্জেলস) কাজ এবং তাদের প্রকৃতি সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। প্রাচীন পাণ্ডুলিপি এবং অন্যান্য উৎস থেকে জানা যায়, এটি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে রক্ষিত হয়েছিল। এনকের লেখাগুলোকে "এপোক্রিফাল" (গোপন বা লুকায়িত) রচনার অংশ হিসাবে বিবেচনা করা হত। অনেক প্রাচীন চার্চ নেতা এগুলোকে পবিত্র গ্রন্থ হিসেবে দেখলেও পরবর্তীতে কিছু লোক এগুলোকে "বিতর্কিত" ও "ধর্মবিরোধী" হিসেবে নিন্দা করে।১৭৭৩ সালে, স্কটিশ অভিযাত্রী জেমস ব্রুস ইথিওপিয়াতে এর একটি কপি খুঁজে পান। তিনি এই পাণ্ডুলিপি ইউরোপে নিয়ে আসেন। ১৮২১ সালে অক্সফোর্ডের ড. রিচার্ড লরেন্স এটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেন। এর মাধ্যমে বিশ্ব প্রথমবারের মতো এনকের নিষিদ্ধ রহস্যগুলোর সঙ্গে পরিচিত হয়।
অধ্যায় ১: দ্য ওয়াচারস
১. এনকের আশীর্বাদের কথা এখানে বলা হয়েছে, যিনি সৎ ও ধার্মিকদের জন্য আশীর্বাদ করেছিলেন, যারা শেষ সময়ের দুঃখ-কষ্টে বেঁচে থাকবেন। তখন সমস্ত দুষ্ট এবং ধর্মহীন ব্যক্তিদের ধ্বংস করা হবে।
২. এনক, যিনি ধার্মিক মানুষ এবং যাঁর চোখ ঈশ্বরের দ্বারা উন্মুক্ত হয়েছিল, একটি দৃষ্টিভঙ্গি দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি পবিত্র এক জনের দর্শন দেখেছি, যা আমার জন্য এই প্রজন্মের জন্য নয়, বরং ভবিষ্যতের প্রজন্মের জন্য।”
৩. এনক বললেন, “পবিত্র মহাশক্তিমান ঈশ্বর স্বর্গ থেকে বেরিয়ে আসবেন।
৪. চিরন্তন ঈশ্বর পৃথিবীতে পা রাখবেন, এমনকি মাউন্ট সাইনাইতেও। এবং তিনি তাঁর মহাশক্তির প্রকাশ দেখাবেন।
৫. সমস্ত লোক ভয়ে কেঁপে উঠবে এবং ফেরেশতারা থরথর কাঁপবে। এবং ভয় ও কাঁপুনি পৃথিবীর শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে।
৬. উঁচু পাহাড়গুলো নড়ে উঠবে, এবং পাহাড়গুলো আগুনের সামনে মোমের মতো গলে যাবে।
৭. পৃথিবী দ্বিখণ্ডিত হয়ে যাবে, এবং যা কিছু পৃথিবীর উপর রয়েছে তা ধ্বংস হবে। আর সমস্ত লোকের উপর বিচার হবে।
৮. কিন্তু ধার্মিকদের সঙ্গে ঈশ্বর শান্তি স্থাপন করবেন। তিনি নির্বাচিতদের রক্ষা করবেন এবং তাদের প্রতি দয়া দেখাবেন। তারা ঈশ্বরের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং সফল হবে।
৯. দেখো! তিনি তাঁর হাজার হাজার পবিত্রদের সঙ্গে আসছেন, সকলের উপর বিচার কার্যকর করতে। তিনি সমস্ত পাপীদের তাদের কর্মের জন্য শাস্তি দেবেন, যা তারা অন্যায়ভাবে করেছে এবং তাদের কঠোর কথা যা তারা ঈশ্বরের বিরুদ্ধে বলেছে।
অধ্যায় ২: সৃষ্টির কথা
১. তোমরা দেখো আকাশে যা কিছু ঘটে, তারা কীভাবে তাদের নির্ধারিত পথে চলে এবং তারা কীভাবে কখনও তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয় না। আকাশের তারা ও গ্রহগুলো কীভাবে নিজেদের ঋতুতে উঠে এবং ঠিক সময়ে অস্ত যায়।
২. পৃথিবীর দিকে তাকাও এবং বুঝতে চেষ্টা করো, যা কিছু ঘটছে তা কতটা সুনির্দিষ্ট। গ্রীষ্ম এবং শীতে পৃথিবী জল দ্বারা পূর্ণ হয় এবং মেঘ, শিশির ও বৃষ্টি তার উপর পড়ে।
৩. আবার, গ্রীষ্মকালে সূর্য কীভাবে উঁচুতে উঠে এবং পৃথিবী তার তাপে উত্তপ্ত হয়। তখন মানুষ ছায়া খোঁজে এবং গরম থেকে বাঁচতে ঠাণ্ডা জায়গায় আশ্রয় নেয়।
৪. গাছপালা কীভাবে নিজেদের সবুজ পাতা দ্বারা ঢেকে দেয় এবং ফল ধরে, এ সম্পর্কে চিন্তা করো।
৫. সকলেই ঈশ্বরের চিরন্তন সৃষ্টির অংশ। তাঁর আদেশে যা কিছু ঘটে, তা সঠিক নিয়মে ঘটে।
অধ্যায় ৩: পতিত ফেরেশতারা
১. যখন মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল, তখন তাদের মধ্যে খুবই সুন্দর এবং আকর্ষণীয় মেয়েদের জন্ম হল।
২. স্বর্গের ফেরেশতারা তাদের দেখলেন এবং তাদের প্রতি আকৃষ্ট হলেন। তারা একে অপরকে বললেন, "চলো, আমরা নিজেদের জন্য নারীদের বেছে নিই এবং তাদের সঙ্গে সন্তান জন্ম দেই।"
৩. তাদের নেতা সেমজাজা বললেন, "আমি ভয় পাচ্ছি তোমরা হয়তো এই কাজের জন্য রাজি হবে না, আর সেই ক্ষেত্রে আমি একাই মহাপাপের শাস্তি ভোগ করব।"
৪. কিন্তু তারা সবাই তাকে বলল, "আমরা শপথ করি যে আমরা তোমার সঙ্গে থাকব। আমরা একসঙ্গে এই কাজ করব।"
৫. তারা সকলে শপথ করল এবং নিজেদের পরিকল্পনায় অটল থাকল। তাদের সংখ্যা ছিল মোট দুইশো। তারা মাউন্ট হারমনের শীর্ষে নেমে এল, কারণ তারা সেখানে শপথ করেছিল এবং নিজেদের অঙ্গীকার করেছিল।
৬. তাদের নেতা এবং তাদের প্রধানদের নাম হলো:
- সেমলাজাজ
- আরাক্লবা
- রামিয়েল
- কোকাবেল
- তামলেল
- রামলেল
- দানেল
- এজেকিয়েল
- বারাকিয়াল
- আরমারোস
- বাটারেল
- আনানেল
- জাকলিয়েল
- সামসাপেল
- সেতারেল
- তুরেল
- জমজায়েল
- সারিয়েল
৭. এই ফেরেশতারা মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল এবং তাদের সঙ্গে সন্তান জন্ম দিল।
৮. ফেরেশতারা মেয়েদের বিভিন্ন জাদু শেখাল, শেকড় কাটার কৌশল দেখাল এবং বিভিন্ন গাছপালা সম্পর্কে জ্ঞান দিল।
৯. নারীরা গর্ভবতী হল এবং বিশাল দৈত্য সন্তানদের জন্ম দিল, যাদের উচ্চতা ছিল তিন হাজার এল। তারা মানুষের সমস্ত সম্পদ খেয়ে ফেলে।
অধ্যায় ৩: পতিত ফেরেশতারা (চলমান)
১০. এই দৈত্যরা পাখি, পশু, সরীসৃপ, এবং মাছের বিরুদ্ধে পাপ করতে শুরু করল। তারা একে অপরকে হত্যা করত এবং মানুষের রক্ত পান করত।
১১. আজাজেল নামক এক ফেরেশতা মানুষকে তলোয়ার, ছুরি, ঢাল, এবং বর্ম বানানো শেখাল। সে পৃথিবীর ধাতুগুলো এবং ধাতু দিয়ে কীভাবে কাজ করতে হয় তা দেখাল। এছাড়া, সে গয়না, অ্যান্টিমনি, এবং চোখ সাজানোর উপায় শিখিয়েছিল।
১২. এর ফলে পৃথিবীতে পাপ বেড়ে গেল, এবং মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হল। তারা পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ল এবং নৈতিকভাবে নষ্ট হয়ে গেল।
১৩. সেমজাজা জাদু এবং শেকড় কাটার কৌশল শিখিয়েছিল। অন্যান্য ফেরেশতারাও মানুষকে আকাশের গ্রহ-নক্ষত্রের চিহ্ন, পৃথিবীর লক্ষণ, মেঘের জ্ঞান, সূর্যের চক্র এবং চাঁদের গতিপথ সম্পর্কে শিক্ষা দিয়েছিল।
১৪. এই সমস্ত পাপের কারণে পৃথিবী ভরে গেল রক্তে, এবং মানুষ তাদের অত্যাচারের জন্য আকাশে ফরিয়াদ করতে শুরু করল।
অধ্যায় ৪: ফেরেশতাদের মধ্যস্থতা
১. মাইকেল, উরিয়েল, রাফায়েল, এবং গ্যাব্রিয়েল নামক চারজন প্রধান ফেরেশতা স্বর্গ থেকে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন যে পৃথিবী রক্তে ভরে গেছে এবং সর্বত্র নৈরাজ্য চলছে।
২. তারা একে অপরকে বললেন, "পৃথিবী এখন বাসযোগ্য নয়। মানুষের আত্মার কান্না স্বর্গের ফটক পর্যন্ত পৌঁছেছে।"
৩. তারা ঈশ্বরের কাছে গিয়ে বললেন, "পরম করুণাময় প্রভু, আপনি সমস্ত কিছু জানেন। আপনার সম্মুখে সব কিছু উন্মুক্ত। আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন যে আজাজেল মানুষকে কেমন শিক্ষা দিয়েছে এবং তাদের মধ্যে কীভাবে পাপ ছড়িয়ে পড়েছে।"
৪. "সেমজাজা এবং তার সহযোগীরা মর্ত্যের মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং তাদেরকে পাপের জ্ঞান দিয়েছে। তাদের এই কাজের কারণে পৃথিবী রক্তে ভরে গেছে।"
৫. ঈশ্বর বললেন, "আজাজেলকে বেঁধে ফেলে অন্ধকারে নিক্ষেপ করো। একটি গভীর গর্ত তৈরি করে তাকে সেখানে ফেলে দাও। সেই গর্তটি খাড়া এবং পাথর দিয়ে আবৃত থাকবে।"
৬. "তার মুখ অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দাও যেন সে আর কখনো আলো দেখতে না পায়। এবং বিচার দিবসে তাকে চিরস্থায়ী আগুনে নিক্ষেপ করা হবে।"
৭. "রাফায়েল, পৃথিবী থেকে সব পাপ এবং দুষ্কর্ম দূর করো। সমস্ত পাপীদের শাস্তি দাও এবং তাদের ধ্বংস করো। পবিত্র এবং ধার্মিক মানুষদের জন্য শান্তি আনো।"
৮. "গ্যাব্রিয়েল, যারা দৈত্যদের সন্তান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নাও। তারা একে অপরকে হত্যা করবে। তাদের কোনও অনুরোধ বা প্রার্থনা গ্রহণ করা হবে না। তাদের দীর্ঘ জীবন প্রত্যাখ্যান করো।"
৯. "মাইকেল, সেমজাজা এবং তার সহযোগীদের শাস্তি দাও। তাদের চিরস্থায়ী কারাগারে পাঠাও। তাদের সমস্ত প্রজন্মের জন্য শাস্তি ভোগ করতে হবে। বিচার দিবস পর্যন্ত তারা বন্দী থাকবে।"
১০. এরপর সমস্ত পৃথিবী পরিষ্কার হবে, এবং ধার্মিক এবং পবিত্র মানুষেরা নতুন জীবনে প্রবেশ করবে।
অধ্যায় ৫: ধার্মিকতার বাণী
১. এই অধ্যায়ে বলা হয়েছে ধার্মিকদের মহিমা ও গুণাবলী সম্পর্কে। এতে উল্লেখ করা হয় যে, যারা ধার্মিক, তাদের জন্য ঈশ্বর শান্তি ও আশীর্বাদ নিয়ে আসবেন। তবে যারা পাপী, তাদের জন্য কোনো ক্ষমা বা মুক্তি থাকবে না।
২. এনক বলেন, “তোমরা আকাশ এবং পৃথিবীর দিকে তাকাও এবং সৃষ্টিকর্তার কাজগুলো পর্যবেক্ষণ করো। তাঁর সৃষ্টি কত সুন্দর এবং সুনির্দিষ্টভাবে পরিচালিত হচ্ছে। সূর্য, চাঁদ, এবং নক্ষত্ররা নির্ধারিত নিয়ম মেনে চলে এবং কখনও তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হয় না।”
৩. “তোমরা গাছপালা এবং ফসলের দিকে তাকাও, কীভাবে তারা নিজেদের ঋতু অনুযায়ী ফল ধরে এবং পরিপূর্ণ হয়। সমস্ত সৃষ্টিই ঈশ্বরের নির্দেশ পালন করে।”
৪. “কিন্তু মানুষ, যারা পাপ করেছে, তারা ঈশ্বরের নির্দেশনা থেকে সরে গেছে। তারা পৃথিবীকে কলুষিত করেছে এবং অন্যায়ের পথে চলেছে।”
৫. “যারা ধার্মিক, তাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে। তারা ঈশ্বরের মহিমা দেখবে এবং চিরস্থায়ী সুখ লাভ করবে।”
৬. ঈশ্বর বলেন, “তোমাদের মধ্যে যারা ধার্মিক এবং আমার কথা শোনে, আমি তাদের জন্য শান্তি এবং করুণা আনব। কিন্তু যারা অন্যায় করেছে, তাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।”
৭. “পৃথিবী পবিত্র হয়ে উঠবে। যারা পাপ করেছে, তারা ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের নাম এবং অস্তিত্ব চিরতরে মুছে যাবে।”
৮. এনক আরও বলেন, “ধার্মিকরা ঈশ্বরের সঙ্গে বাস করবে। তারা সুখী এবং শান্তিপূর্ণ জীবন কাটাবে। ঈশ্বর তাদের জন্য আলোর রাজত্ব স্থাপন করবেন।”
৯. “পাপীরা তাদের কৃতকর্মের জন্য বিচার দিবসে শাস্তি পাবে। তাদের চিরকালীন শাস্তি হবে, এবং তারা আর পৃথিবীতে জায়গা পাবে না।”
১০. “ধার্মিকদের জন্য পৃথিবীতে একটি নতুন যুগের সূচনা হবে। তারা দীর্ঘ জীবন পাবে, তাদের সন্তানরাও ধার্মিক হবে এবং ঈশ্বরের পথে চলবে।”
১১. “পৃথিবী তখন ভরে উঠবে আলোর সৌন্দর্যে। কোনো দুঃখ, যন্ত্রণা বা পাপ সেখানে থাকবে না। এটা হবে শান্তি এবং পবিত্রতার স্থান।”
১২. “তোমরা আকাশ এবং পৃথিবীর কাজ দেখো এবং শিক্ষা নাও। ঈশ্বর তাঁর প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজ করেন এবং তোমাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রস্তুত করেছেন।”
১৩. “তোমরা যারা ধার্মিক, তাদের জন্য ঈশ্বরের রাজত্বে কোনো সীমা থাকবে না। তাঁর দয়া এবং করুণা চিরকাল তোমাদের সঙ্গে থাকবে।”
শেষ কথা: এই অধ্যায়টি ধার্মিক এবং পাপীদের মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে। এটি ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতি এবং তাঁর পবিত্র পরিকল্পনার উপর জোর দেয়। পাপীদের ধ্বংস এবং ধার্মিকদের পুরস্কারের কথা এখানে বারবার উল্লেখ করা হয়েছে।
অধ্যায় ৬: ফেরেশতাদের শাস্তি
১. এনক বলেন, “ঈশ্বর ফেরেশতাদের পাপ এবং তাদের কর্মের জন্য চরম শাস্তি ঘোষণা করেছেন। তারা যারা পবিত্র আদেশ অমান্য করে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল, তাদের পরিণাম ভয়াবহ হবে।”
২. “সেই ফেরেশতারা, যারা স্বর্গের পবিত্রতা ত্যাগ করে পৃথিবীতে মানবজাতির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল, তারা তাদের অপরাধের জন্য বিচার দিবসে কঠিন শাস্তি পাবে।”
৩. ঈশ্বর বলেন, “আজাজেল, যে ফেরেশতা মানুষের মধ্যে পাপ ছড়িয়েছে, তাকে বিশেষ শাস্তি দেওয়া হবে। তাকে একটি গর্তে বন্দী করে চিরকাল অন্ধকারে রাখা হবে। তাকে আর কখনো আলোর মুখ দেখতে দেওয়া হবে না।”
৪. “আজাজেল মানুষের কাছে অস্ত্র তৈরি করার কৌশল শিখিয়েছে, এবং এর ফলে মানুষ একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। সে পৃথিবীতে নারীদের মেকআপ এবং অলংকার পরিধানের কৌশল শিখিয়েছে, যা পাপের দিকে মানুষকে আরও টেনেছে।”
৫. ঈশ্বর বলেন, “আজাজেলের সঙ্গে যারা পাপ করেছিল, সেই সমস্ত ফেরেশতারা শাস্তি পাবে। তাদের বেঁধে পৃথিবীর গভীর অন্ধকারে নিক্ষেপ করা হবে, যেখানে তারা বিচার দিবস পর্যন্ত বন্দী থাকবে।”
৬. “সেমজাজা, যিনি ফেরেশতাদের নেতা ছিলেন এবং মানবজাতির সঙ্গে মিশে তাদের মধ্যে পাপ ছড়িয়েছিলেন, তার শাস্তি হবে ভয়ঙ্কর। তাকে তার সহযোগীদের সঙ্গে চিরতরে বন্ধী রাখা হবে।”
৭. ফেরেশতারা যেসব পাপ করেছিল:
- তারা মর্ত্যের নারীদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছিল।
- তারা মানবজাতিকে বিভিন্ন জাদু এবং জ্ঞানের কৌশল শিখিয়ে দিয়েছিল, যা ঈশ্বরের আদেশের বিরুদ্ধে ছিল।
- তারা পৃথিবীর শুদ্ধতাকে নষ্ট করেছিল এবং মানুষকে দুঃখ-কষ্টের মধ্যে ফেলেছিল।
৮. ঈশ্বর বলেন, “এই ফেরেশতাদের সন্তান, যারা দৈত্য, তাদের আর পৃথিবীতে থাকতে দেওয়া হবে না। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের আত্মারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে এবং মানুষদের বিপথে নিয়ে যাবে। তাদের বলা হবে ‘অশুভ আত্মা’।”
৯. “এই সমস্ত অপবিত্র আত্মারা মানুষের মধ্যে পাপ ছড়াবে এবং তাদের বিভ্রান্ত করবে। কিন্তু আমি আমার নির্বাচিতদের রক্ষা করব এবং তাদের পাপের প্রভাব থেকে মুক্ত রাখব।”
১০. “পৃথিবীকে শুদ্ধ করার জন্য, এই ফেরেশতাদের শাস্তি দেওয়া হবে এবং তাদের নাম চিরতরে মুছে ফেলা হবে। তাদের প্রভাব পৃথিবী থেকে সম্পূর্ণরূপে দূর করা হবে।”
ফেরেশতাদের শাস্তির চূড়ান্ত ঘোষণা
১১. ঈশ্বর বলেন, “যে পাপ পৃথিবীতে ছড়িয়েছে, তা আমি নির্মূল করব। আমি পৃথিবীকে পুনরায় পবিত্র করব এবং ধার্মিকদের জন্য একটি নতুন পৃথিবী সৃষ্টি করব।”
১২. “পাপীরা এবং তাদের বংশধরদের চিরতরে ধ্বংস করা হবে। তারা আর কখনো পৃথিবীতে দুঃখ-কষ্টের কারণ হতে পারবে না।”
১৩. ঈশ্বর নির্দেশ দেন, “মাইকেল, রাফায়েল, গ্যাব্রিয়েল এবং উরিয়েল, তোমরা সবাই মিলে পৃথিবীকে শুদ্ধ করো। সমস্ত পাপীদের শাস্তি দাও এবং পৃথিবী থেকে তাদের অপসারণ করো।”
১৪. ফেরেশতাদের নেতা এবং তাদের দলকে বিচার দিবস পর্যন্ত বন্দী রাখা হবে। তারা আর কখনো পৃথিবীতে ফিরে আসবে না।
শেষ মন্তব্য
এই অধ্যায়টি ফেরেশতাদের পাপ এবং তাদের শাস্তির উপর আলোকপাত করে। এটি পৃথিবীর শুদ্ধিকরণ এবং ধার্মিকদের জন্য একটি পবিত্র স্থান তৈরির প্রতিশ্রুতি বহন করে। ফেরেশতাদের পাপ এবং তাদের শাস্তি মানুষকে সতর্কবার্তা দেয়, যাতে তারা ঈশ্বরের আদেশের বাইরে কোনো কাজ না করে।
অধ্যায় ৭: দৈত্যদের অপকর্ম এবং তাদের ধ্বংস
১. এই অধ্যায়ে দৈত্যদের কথা বলা হয়েছে, যাদের সৃষ্টি হয়েছিল সেই ফেরেশতাদের মাধ্যমে, যারা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করে পৃথিবীতে নেমে এসেছিল। এই দৈত্যরা পৃথিবীতে দুঃখ-কষ্ট এবং ধ্বংস ডেকে এনেছিল।
২. এনক বলেন, "যখন মানুষের মেয়ে-সন্তানরা সুন্দরী হয়ে উঠল, তখন সেই ফেরেশতারা তাদের দেখে আকৃষ্ট হয়ে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করল। তাদের মিলনের ফলে দৈত্যদের জন্ম হয়।"
৩. এই দৈত্যদের উচ্চতা ছিল বিশাল এবং তারা পৃথিবীর সমস্ত সম্পদ ধ্বংস করতে শুরু করেছিল।
৪. তারা শুধু খাবারের জন্য নয়, বরং বিনোদনের জন্যও মানুষ এবং পশুদের হত্যা করত। তারা মানুষের রক্ত পান করত এবং মানবজাতির মধ্যে হিংসা ও ব্যভিচার ছড়িয়েছিল।
দৈত্যদের অপকর্ম
৫. এই দৈত্যরা শুধু পৃথিবীর সম্পদ খেয়েই শেষ করেনি, তারা একে অপরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছিল। তারা মানুষের জ্ঞান এবং শক্তিকে অপব্যবহার করত।
৬. আজাজেল এবং তার সহযোগী ফেরেশতারা মানুষের কাছে অস্ত্র এবং যুদ্ধের কৌশল শিখিয়েছিল। তারা মানুষকে জাদু এবং বিভিন্ন অপবিত্র কাজ শিখিয়ে তাদের পাপের পথে ঠেলে দিয়েছিল।
৭. ঈশ্বর যখন এই দৈত্যদের অপকর্ম দেখলেন, তখন তিনি তাদের ধ্বংস করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তিনি বললেন, "এই দৈত্যরা আমার সৃষ্টিকে কলুষিত করেছে। তাদের চিরতরে ধ্বংস করা হবে।"
ঈশ্বরের নির্দেশ এবং বিচার
৮. ঈশ্বর বলেন, “মাইকেল এবং গ্যাব্রিয়েল, তোমরা এই দৈত্যদের ধ্বংস করো। তাদের একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করতে দাও, যাতে তারা নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে।”
৯. “তাদের আত্মারা মৃত্যুর পরে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াবে এবং মানুষকে বিপথে নিয়ে যাবে। তারা হবে অশুভ আত্মা, যারা মানুষের মধ্যে পাপ ছড়াবে।”
১০. “তবে, যারা ধার্মিক এবং আমার আদেশ মেনে চলে, তাদের আমি এই অশুভ আত্মাদের প্রভাব থেকে রক্ষা করব।”
দৈত্যদের ধ্বংস এবং পৃথিবীর শুদ্ধিকরণ
১১. ঈশ্বরের আদেশে ফেরেশতারা দৈত্যদের ধ্বংস করে দেয়। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে।
১২. দৈত্যদের ধ্বংসের পর, তাদের আত্মারা অশুভ আত্মায় পরিণত হয়। এই আত্মারা পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায় এবং দুর্বল মানুষদের প্রলোভন দেখায়।
১৩. ঈশ্বর বলেন, “পৃথিবী এখন শুদ্ধ হবে। আমি ধার্মিকদের জন্য একটি নতুন যুগ শুরু করব, যেখানে পাপ আর স্থান পাবে না।”
পৃথিবীর শুদ্ধিকরণ এবং ধার্মিকদের পুনর্জন্ম
১৪. ঈশ্বর পৃথিবী থেকে সমস্ত পাপ দূর করেন। তিনি বলেন, “যে কেউ আমার আদেশ পালন করবে, তাদের জন্য আমি শান্তি এবং সুখ আনব। তারা দীর্ঘ জীবন পাবে এবং তাদের সন্তানরা ধার্মিকতার পথে চলবে।”
১৫. “যারা পাপ করেছে, তারা শাস্তি পাবে। তাদের নাম আর স্মরণ করা হবে না।”
১৬. এই নতুন যুগে, পৃথিবী হবে আলোকিত এবং শান্তিপূর্ণ। সমস্ত জাতি ঈশ্বরের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবে এবং তাঁর মহিমা ঘোষণা করবে।
শেষ কথা
এই অধ্যায়ে দৈত্যদের জন্ম, তাদের অপরাধ, এবং তাদের ধ্বংসের কথা বলা হয়েছে। এটি দেখায় যে, পাপ কখনোই ঈশ্বরের নজর এড়ায় না এবং পাপীদের চূড়ান্ত শাস্তি অনিবার্য। পাশাপাশি এটি ধার্মিকদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের প্রতিশ্রুতি দেয়।
অধ্যায় ৮: বিচার দিবস
১. এই অধ্যায়ে এনক ঈশ্বরের বিচার দিবসের ঘোষণা এবং তার বিশাল প্রভাবের কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন যে, বিচার দিবস শুধুমাত্র পাপীদের ধ্বংসের দিনই হবে না, এটি ধার্মিকদের পুরস্কারের দিনও হবে।
২. এনক বলেন, “আমি একটি মহান এবং ভয়ঙ্কর দিন দেখেছি, যেদিন ঈশ্বর তাঁর সিংহাসন থেকে সমস্ত পাপীদের বিচার করবেন। সেই দিন, প্রতিটি মানুষের কাজ প্রকাশিত হবে এবং ঈশ্বর ন্যায়বিচার করবেন।”
পাপীদের পরিণতি
৩. ঈশ্বর বলেন, “যারা আমার আদেশ অমান্য করেছে এবং পৃথিবীতে পাপ ছড়িয়েছে, তাদের শাস্তি হবে কঠিন। আমি তাদের চিরকালীন অন্ধকারে নিক্ষেপ করব।”
৪. “তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে, এবং তারা বুঝতে পারবে যে তাদের সমস্ত পাপ আমার সামনে প্রকাশিত। তাদের কোনো আশ্রয় বা রক্ষা থাকবে না।”
৫. পাপীরা ঈশ্বরের সামনে ভয়ে কাঁপবে এবং তাদের কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চাইবে। তবে তাদের ক্ষমা করা হবে না, কারণ তারা অনেক সুযোগ পেয়েও ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলেনি।
ধার্মিকদের পুরস্কার
৬. ঈশ্বর বলেন, “যারা আমার পথ অনুসরণ করেছে এবং ধার্মিকতা বজায় রেখেছে, তাদের জন্য চিরন্তন শান্তি ও সুখ অপেক্ষা করছে। তারা আমার আশীর্বাদ লাভ করবে।”
৭. “ধার্মিকদের জীবন হবে আনন্দে পূর্ণ। তাদের আর কোনো দুঃখ বা কষ্ট থাকবে না। আমি তাদের জন্য নতুন পৃথিবী প্রস্তুত করেছি।”
৮. “তারা আমার সঙ্গে বাস করবে এবং আমার আলোয় আলোকিত হবে। তারা আমার সঙ্গে চিরকাল রাজত্ব করবে।”
বিচার দিবসের ভয়াবহতা
৯. বিচার দিবসের দিন আকাশ এবং পৃথিবী কাঁপবে। পর্বত এবং পাহাড় মোমের মতো গলে যাবে। নদী এবং সাগরের পানি উচ্ছ্বাসিত হবে।
১০. ফেরেশতারা তাদের শিঙ্গা বাজাবে, যা সমস্ত জাতিকে সতর্ক করবে। প্রত্যেকেই ঈশ্বরের সামনে হাজির হবে, এবং তাঁর সামনে কেউ পালাতে পারবে না।
১১. ঈশ্বর বলবেন, “পৃথিবীকে আমি শুদ্ধ করব। যারা অন্যায় করেছে, তাদের ধ্বংস করা হবে, এবং যারা ধার্মিক, তারা পুরস্কৃত হবে।”
ধার্মিকতার পুনঃপ্রতিষ্ঠা
১২. পাপীদের ধ্বংসের পর, পৃথিবী নতুন করে গড়ে উঠবে। এটি হবে এক শান্তির স্থান, যেখানে শুধুমাত্র ধার্মিকরাই বাস করবে।
১৩. ঈশ্বর বলেন, “আমি পৃথিবীকে আবার আমার আদেশ অনুযায়ী পরিচালিত করব। আমার নির্বাচিতরা সেখানে বাস করবে, এবং তারা চিরকাল সুখে থাকবে।”
অন্তিম আদেশ
১৪. ঈশ্বর বলেন, “তোমরা যারা ধার্মিক, তারা আমার কাছে এসে আমার শান্তি লাভ করো। তোমাদের জন্য আমি একটি নতুন রাজত্ব তৈরি করেছি, যেখানে পাপ এবং দুঃখের কোনো স্থান নেই।”
১৫. পাপীরা, যারা পৃথিবীকে কলুষিত করেছে, তাদের নাম আর স্মরণ করা হবে না। তাদের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে যাবে।
১৬. বিচার দিবস শেষে ঈশ্বর তাঁর নির্বাচিতদের নিয়ে নতুন যুগ শুরু করবেন, যেখানে শুধুমাত্র পবিত্রতা এবং আলো থাকবে।
শেষ মন্তব্য
এই অধ্যায়ে বিচার দিবসের ভয়াবহতা এবং তার সাথে সম্পর্কিত শুদ্ধিকরণ এবং পুরস্কারের কথা বলা হয়েছে। এটি দেখায় যে, ঈশ্বরের ন্যায়বিচার অবিচল এবং চূড়ান্ত। পাপীদের ধ্বংস এবং ধার্মিকদের পুরস্কার নিশ্চিত।
অধ্যায় ৯: সুসংবাদ এবং পরিণতি
১. এই অধ্যায়ে, মাইকেল, গ্যাব্রিয়েল, রাফায়েল এবং উরিয়েল ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে পৃথিবী এবং মানুষের জন্য সুসংবাদ ঘোষণা করেন।
২. তারা ঈশ্বরের প্রতি মানুষের পাপ এবং ব্যভিচারের ব্যাপারে অভিযোগ তুলে এবং তাদের জন্য দয়া ও শান্তি প্রার্থনা করেন। তারা ঈশ্বরের কাছ থেকে সুসংবাদ লাভ করে।
৩. সুসংবাদ হল যে, ঈশ্বর তাঁর নির্বাচিতদের জন্য শান্তি এবং সুখ আনবেন। পৃথিবী পবিত্র হবে এবং সমস্ত পাপ দূর হয়ে যাবে।
৪. ফেরেশতারা ঘোষণা করেন, “পৃথিবীতে এখন শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। এবং যারা ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলবে, তারা চিরকাল শান্তি এবং সুখে বাস করবে।"
৫. যারা পাপ করেছে, তাদের জন্য কোনো মাফ থাকবে না। তারা বিচারের মুখোমুখি হবে এবং তাদের শাস্তি নিশ্চিত।
অধ্যায় ১০: প্রার্থনা এবং পরিত্রাণ
১. এই অধ্যায়ে ঈশ্বরের প্রতি ফেরেশতাদের প্রার্থনা এবং মানুষের জন্য পরিত্রাণের আহ্বান উল্লেখ করা হয়েছে। ফেরেশতারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়া পাপ এবং ধ্বংস দেখে ঈশ্বরের কাছে করুণা প্রার্থনা করেন।
ফেরেশতাদের প্রার্থনা
২. ফেরেশতারা একত্রিত হয়ে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেন। তারা বলেন, "হে সর্বশক্তিমান ঈশ্বর, আপনি সমস্ত কিছু জানেন এবং দেখেন। আমরা পৃথিবীতে পাপ এবং ধ্বংস দেখছি। মানুষ অন্যায় করছে, এবং ফেরেশতারা আপনার আদেশ লঙ্ঘন করে পাপ ছড়িয়েছে।"
৩. "আপনার সৃষ্ট পৃথিবী রক্তে ভরে গেছে, এবং মানুষের কান্না স্বর্গের দরজা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। হে ঈশ্বর, আপনার মহিমা এবং করুণায় পৃথিবীকে রক্ষা করুন।"
৪. "আমাদের নির্দেশ দিন, যাতে আমরা এই পাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারি এবং পৃথিবীকে শুদ্ধ করতে পারি।"
ঈশ্বরের প্রতিক্রিয়া
৫. ঈশ্বর তাদের প্রার্থনা শুনে বলেন, "আমি পৃথিবীর পাপ সম্পর্কে জানি। আমি সবকিছু দেখেছি এবং শুনেছি। এই পাপীদের জন্য আমার শাস্তি নির্ধারিত হয়েছে।"
৬. ঈশ্বর বলেন, "আজাজেল এবং তার সহযোগীদের ধ্বংস করার সময় এসেছে। তাদের সমস্ত কাজ এবং পাপ পৃথিবী থেকে মুছে ফেলতে হবে।"
৭. "তোমরা ফেরেশতারা, আজাজেলকে বন্দী করো এবং তাকে গভীর অন্ধকারে নিক্ষেপ করো। তাকে চিরকাল বন্দী রাখো এবং তার মুখ চিরতরে অন্ধকার দিয়ে ঢেকে দাও।"
৮. "তোমরা সেমজাজা এবং তার দলের অন্য ফেরেশতাদের ধরে ফেলো। তাদের শাস্তি হবে চিরন্তন, এবং তারা আর কখনো পৃথিবীতে ফিরে আসবে না।"
মানুষের জন্য পরিত্রাণ
৯. ঈশ্বর বলেন, "তোমরা পাপীদের ধ্বংস করো এবং ধার্মিকদের রক্ষা করো। পৃথিবীকে শুদ্ধ করো, যাতে এটি আবার আমার পরিকল্পনা অনুযায়ী চলতে পারে।"
১০. "আমি আমার নির্বাচিতদের জন্য শান্তি এবং করুণা আনব। তারা আমার সঙ্গে বাস করবে, এবং তাদের জন্য চিরন্তন আশীর্বাদ অপেক্ষা করছে।"
১১. "ধার্মিকদের জন্য পৃথিবী হবে শান্তির স্থান। তাদের জন্য আমি এমন একটি জীবন প্রস্তুত করেছি, যেখানে কোনো দুঃখ বা কষ্ট থাকবে না।"
পাপীদের জন্য শাস্তি
১২. ঈশ্বর বলেন, "যারা পাপ করেছে এবং পৃথিবীকে কলুষিত করেছে, তাদের জন্য কোনো মুক্তি নেই। তাদের চিরকালীন শাস্তি ভোগ করতে হবে। তারা তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে।"
১৩. "তাদের ধ্বংস হবে এবং তাদের অস্তিত্ব চিরতরে মুছে যাবে। তাদের নাম পৃথিবীতে আর স্মরণ করা হবে না।"
ধার্মিকদের পুরস্কার
১৪. ঈশ্বর বলেন, "যারা আমার কথা মেনে চলে এবং আমার পথে থাকে, তাদের জন্য আমি চিরন্তন সুখ এবং শান্তি নিশ্চিত করেছি। তাদের জন্য আমার আশীর্বাদ থাকবে চিরকাল।"
১৫. "তাদের জীবন হবে আনন্দময়। তারা সুখে বাস করবে এবং তাদের সন্তানরাও ধার্মিকতার পথে চলবে।"
১৬. "ধার্মিকরা আমার মহিমা দেখবে এবং আমার সঙ্গে চিরকাল রাজত্ব করবে। আমি তাদের প্রতি আমার আলো বর্ষণ করব এবং তাদের সুখী রাখব।"
পৃথিবীর শুদ্ধিকরণ
১৭. ফেরেশতারা ঈশ্বরের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ শুরু করেন। তারা পাপীদের ধ্বংস করে এবং পৃথিবীকে শুদ্ধ করতে থাকে।
১৮. পৃথিবী থেকে সমস্ত পাপ এবং অপবিত্রতা দূর হয়ে যায়। ঈশ্বর তাঁর নির্বাচিতদের জন্য একটি নতুন যুগের সূচনা করেন।
১৯. নতুন পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। সমস্ত জাতি ঈশ্বরের প্রশংসা করতে থাকে এবং তাঁর আদেশ মেনে চলে।
শেষ কথা
এই অধ্যায়টি দেখায় যে, ঈশ্বর কেবল পাপীদের ধ্বংস করেই থেমে থাকেন না; তিনি ধার্মিকদের রক্ষা করেন এবং তাদের জন্য একটি নতুন এবং সুন্দর ভবিষ্যৎ প্রস্তুত করেন। এটি আমাদের শিখায় যে, প্রার্থনা এবং বিশ্বাস ঈশ্বরের করুণা লাভের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
অধ্যায় ১১: শুদ্ধ পৃথিবীর নতুন যুগ
১. এই অধ্যায়ে শুদ্ধিকরণের পর নতুন পৃথিবীর সূচনা এবং ধার্মিকদের জন্য ঈশ্বরের প্রতিশ্রুতির কথা বলা হয়েছে। এটি দেখায়, কীভাবে ঈশ্বর তাঁর নির্বাচিতদের জন্য পৃথিবীকে নতুনভাবে সাজাবেন এবং পাপীদের চিরতরে দূর করবেন।
পৃথিবীর শুদ্ধিকরণ এবং পুনর্গঠন
২. ঈশ্বর বলেন, “আমি পৃথিবীকে সমস্ত পাপ থেকে শুদ্ধ করব। আমি এটি পুনরায় গড়ে তুলব, যাতে এটি ধার্মিকদের জন্য একটি শান্তির স্থান হয়ে ওঠে।”
৩. পৃথিবীর সমস্ত অপবিত্রতা এবং পাপ ধ্বংস হয়ে যাবে। সবকিছু নতুনভাবে সাজানো হবে, যাতে ঈশ্বরের মহিমা প্রতিফলিত হয়।
৪. নদীগুলো আরও স্ফটিকস্বচ্ছ হয়ে উঠবে, এবং মাটি উর্বর হবে। গাছপালা আরও বেশি ফলবতী হবে এবং শস্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
৫. পাহাড় এবং উপত্যকাগুলো শোভিত হবে, এবং সব জায়গায় শান্তি বিরাজ করবে। পৃথিবীর প্রতিটি কোণ হয়ে উঠবে সুন্দর এবং আনন্দদায়ক।
ধার্মিকদের জন্য প্রতিশ্রুতি
৬. ঈশ্বর বলেন, “আমার নির্বাচিতদের জন্য এই পৃথিবী হবে শান্তি এবং আশীর্বাদের স্থান। তারা এখানে চিরকাল সুখী হয়ে বসবাস করবে।”
৭. “তাদের জন্য আমি চিরস্থায়ী আলো এবং সুখ নিশ্চিত করেছি। তাদের আর কোনো দুঃখ বা কষ্ট স্পর্শ করতে পারবে না।”
৮. “তারা এখানে তাদের সন্তানদের সঙ্গে থাকবে এবং নতুন প্রজন্ম ধার্মিকতার পথে চলবে। আমার নির্দেশ অনুযায়ী, তারা সবাই সুখী এবং নিরাপদ থাকবে।”
পাপীদের অনুপস্থিতি
৯. পাপীদের জন্য কোনো স্থান থাকবে না। তারা পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে যাবে, এবং তাদের নাম আর কেউ স্মরণ করবে না।
১০. ঈশ্বর বলেন, “পাপীদের অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। তারা আমার সৃষ্টিকে কলুষিত করেছিল, কিন্তু এখন তাদের আর কোনো ক্ষমতা নেই। তাদের শাস্তি চিরতরে কার্যকর থাকবে।”
পবিত্রতার প্রতিষ্ঠা
১১. শুদ্ধ পৃথিবীতে শুধুমাত্র ধার্মিকতা এবং পবিত্রতা বিরাজ করবে। ঈশ্বর বলেন, “এখন থেকে এই পৃথিবী হবে আমার রাজত্ব, যেখানে শুধু ভালোবাসা এবং শান্তি থাকবে।”
১২. “যারা আমার প্রতি বিশ্বাসী, তারা এই পবিত্র রাজত্বে বাস করবে। তাদের জন্য কোনো শত্রুতা বা দ্বন্দ্ব থাকবে না।”
স্বর্গ এবং পৃথিবীর মিলন
১৩. ঈশ্বরের নির্দেশে স্বর্গ এবং পৃথিবী একসঙ্গে কাজ করবে। ফেরেশতারা পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবে এবং ধার্মিকদের সঙ্গে একত্রে বসবাস করবে।
১৪. এই যুগে, ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে। ঈশ্বর তাঁর নির্বাচিতদের সঙ্গে বসবাস করবেন এবং তাদের গাইড করবেন।
১৫. সব জাতি ঈশ্বরের স্তুতি করবে এবং তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করবে। কেউ আর পাপের পথে চলবে না।
ধার্মিকদের নতুন জীবন
১৬. ধার্মিকদের জন্য জীবন হবে আনন্দময়। তারা দীর্ঘায়ু পাবে এবং তাদের জীবন থাকবে শান্তিপূর্ণ।
১৭. তারা ঈশ্বরের মহিমা অনুভব করবে এবং তাঁর আলোয় আলোকিত হবে। তাদের জন্য প্রতিটি দিন হবে সুখের দিন।
শেষ কথা
১৮. এই অধ্যায়টি দেখায়, কীভাবে ঈশ্বর পৃথিবীকে শুদ্ধ করবেন এবং একটি নতুন যুগের সূচনা করবেন, যা শুধুমাত্র ধার্মিকদের জন্য। পাপীদের ধ্বংস এবং ধার্মিকদের পুনর্জন্মের মাধ্যমে পৃথিবী হয়ে উঠবে শান্তি এবং পবিত্রতার স্থান।
১৯. এটি একটি প্রতিশ্রুতি যে, যারা ঈশ্বরের আদেশ মেনে চলে, তারা চিরকাল সুখী এবং আশীর্বাদপ্রাপ্ত থাকবে।
অধ্যায় ১২: ঈশ্বরের আগমন এবং রক্ষা
১. এই অধ্যায়ে এনক ঈশ্বরের আগমন এবং তাঁর নির্বাচিতদের রক্ষার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। এটি দেখায়, কীভাবে ঈশ্বর তাঁর ধার্মিক বান্দাদের জন্য করুণা প্রকাশ করবেন এবং পাপীদের ধ্বংস করবেন।
ঈশ্বরের আগমন
২. এনক বলেন, “আমি দেখলাম যে ঈশ্বর পবিত্র সিংহাসন থেকে নেমে আসছেন। তাঁর সঙ্গে ছিল অগণিত পবিত্র ফেরেশতা। তারা তাঁর নির্দেশ অনুযায়ী পৃথিবী শুদ্ধ করতে প্রস্তুত।”
৩. “ঈশ্বরের আগমন একটি মহৎ এবং ভয়ঙ্কর দৃশ্য। আকাশ আলোকিত হয়ে উঠেছিল, এবং পৃথিবী কম্পমান হচ্ছিল। পর্বত এবং পাহাড়গুলো মোমের মতো গলে যাচ্ছিল।”
৪. “যখন ঈশ্বর নেমে এলেন, তখন সমস্ত জাতি ভয়ে কাঁপতে শুরু করল। পাপীরা তাদের কাজের ফলাফল বুঝতে পেরে ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিল।”
৫. “তবে, যারা ধার্মিক ছিল, তারা ঈশ্বরের আগমন দেখে আনন্দিত হয়েছিল। তারা জানত যে, তাদের জন্য এটি মুক্তি এবং শান্তির সময়।”
ধার্মিকদের রক্ষা
৬. ঈশ্বর বলেন, “যারা আমার কথা শুনেছে এবং আমার পথে চলেছে, তাদের আমি রক্ষা করব। তারা আমার আশীর্বাদ এবং করুণা লাভ করবে।”
৭. “তোমাদের জন্য আমি এমন একটি জায়গা প্রস্তুত করেছি, যেখানে চিরকাল সুখ ও শান্তি থাকবে। তোমরা আর কোনো দুঃখ-কষ্ট অনুভব করবে না।”
৮. “তোমাদের সমস্ত দুশ্চিন্তা দূর হবে, এবং তোমরা আমার সঙ্গেই বাস করবে। তোমরা আমার আলোয় আলোকিত হবে এবং আমার সঙ্গে রাজত্ব করবে।”
পাপীদের শাস্তি
৯. ঈশ্বর বলেন, “যারা পাপ করেছে এবং পৃথিবীকে কলুষিত করেছে, তাদের জন্য কোনো ক্ষমা নেই। তারা চিরকালীন অন্ধকারে নিক্ষিপ্ত হবে।”
১০. “তাদের শাস্তি হবে কঠোর। তারা তাদের কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। তাদের জন্য আলো, আশ্রয় বা মুক্তির কোনো পথ থাকবে না।”
১১. “তাদের ধ্বংস হবে এবং তারা আর কখনো পৃথিবীতে ফিরে আসবে না। তাদের নাম পৃথিবী থেকে মুছে যাবে।”
ঈশ্বরের আলো এবং নতুন যুগের সূচনা
১২. ঈশ্বর পৃথিবীতে একটি নতুন যুগের সূচনা করেন। তিনি বলেন, “এই পৃথিবী এখন থেকে হবে ধার্মিকদের জন্য। এটি হবে পবিত্রতার স্থান, যেখানে পাপের কোনো স্থান নেই।”
১৩. “আমার নির্বাচিতরা চিরকাল সুখে বসবাস করবে। তাদের জীবন শান্তি, আনন্দ এবং ভালোবাসায় পূর্ণ হবে।”
১৪. “আমি তাদের সঙ্গে থাকব এবং তাদের গাইড করব। তাদের জন্য আমি একটি শুদ্ধ পৃথিবী সৃষ্টি করেছি, যেখানে শুধুমাত্র ভালোবাসা এবং ন্যায়বিচার বিরাজ করবে।”
ঈশ্বর এবং মানুষের মধ্যে সম্পর্ক
১৫. ঈশ্বর বলেন, “তোমরা আমার সন্তান, এবং আমি তোমাদের ঈশ্বর। আমি তোমাদের রক্ষা করব এবং তোমাদের প্রতি করুণা প্রদর্শন করব।”
১৬. “তোমরা আমার সঙ্গেই থাকবে এবং আমার আলোয় আলোকিত হবে। তোমাদের জীবনে কোনো ভয় বা দুঃখ থাকবে না।”
শেষ কথা
১৭. এই অধ্যায়টি ঈশ্বরের আগমন এবং তাঁর ন্যায়বিচারের কথা তুলে ধরে। এটি আমাদের শেখায় যে, ঈশ্বর সর্বদা তাঁর নির্বাচিতদের রক্ষা করেন এবং তাদের জন্য শান্তি এবং করুণার পথ তৈরি করেন।
১৮. এটি আরও স্পষ্ট করে যে, পাপীদের শাস্তি চিরন্তন এবং ধার্মিকদের জন্য ঈশ্বরের রাজত্ব চিরকাল স্থায়ী হবে।
অধ্যায় ১৩: পাপীদের শাস্তির ঘোষণা
১. এনক বলেন, “ঈশ্বর আমাকে তাঁর পবিত্র ফেরেশতাদের কাছে পাঠালেন, যেন আমি পাপীদের শাস্তির ঘোষণা দিতে পারি। তিনি আমাকে তাদের পাপ এবং তার পরিণতি সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব দিলেন।”
২. ফেরেশতারা আমাকে বললেন, “তুমি তাদের বলো, যারা ঈশ্বরের আদেশ অমান্য করেছে, তারা শাস্তি পাবে। তাদের ধ্বংস অনিবার্য এবং চিরকালীন শাস্তি অপেক্ষা করছে।”
৩. আমি পাপীদের কাছে গিয়ে তাদের বললাম, “তোমাদের শাস্তি নির্ধারিত হয়ে গেছে। তোমাদের ক্ষমা চাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই। তোমরা ঈশ্বরের আদেশ লঙ্ঘন করেছ এবং পৃথিবীকে কলুষিত করেছ।”
৪. পাপীরা আমার কথা শুনে কেঁদে উঠল এবং বলল, “আমাদের জন্য করুণা প্রার্থনা করো, যেন ঈশ্বর আমাদের ক্ষমা করেন।” কিন্তু তাদের জন্য করুণা প্রদর্শনের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
অধ্যায় ১৪: ঈশ্বরের মহিমা এবং শাস্তির ঘোষণা
১. ঈশ্বরের সিংহাসনের দৃশ্য আমি দেখেছিলাম। এটি ছিল আলো এবং অগ্নিশিখায় পরিবেষ্টিত। এর চারপাশে অগণিত ফেরেশতা দাঁড়িয়ে ঈশ্বরের মহিমা গাইছিল।
২. ঈশ্বর বললেন, “যারা পাপ করেছে, তাদের শাস্তি চিরকালীন হবে। তাদের ধ্বংস নিশ্চিত এবং তাদের আর কখনো আলো দেখতে দেওয়া হবে না।”
৩. “তবে যারা ধার্মিক এবং আমার কথা মেনে চলে, তারা আমার সঙ্গে চিরকাল রাজত্ব করবে। আমি তাদের শান্তি এবং সুখ দেব।”
৪. এই সিংহাসনের সামনে সব জাতি মাথা নত করবে এবং ঈশ্বরের মহিমা ঘোষণা করবে।
২. ঈশ্বর বললেন, “যারা পাপ করেছে, তাদের শাস্তি চিরকালীন হবে। তাদের ধ্বংস নিশ্চিত এবং তাদের আর কখনো আলো দেখতে দেওয়া হবে না।”
৩. “তবে যারা ধার্মিক এবং আমার কথা মেনে চলে, তারা আমার সঙ্গে চিরকাল রাজত্ব করবে। আমি তাদের শান্তি এবং সুখ দেব।”
৪. এই সিংহাসনের সামনে সব জাতি মাথা নত করবে এবং ঈশ্বরের মহিমা ঘোষণা করবে।
অধ্যায় ১৫: ফেরেশতাদের শাস্তি এবং পাপীদের ধ্বংস
১. ঈশ্বর ফেরেশতাদের বললেন, “তোমরা যারা পাপ করেছ এবং আমার আদেশ লঙ্ঘন করেছ, তোমাদের শাস্তি চিরকালীন। তোমাদের জন্য করুণা নেই।”
২. “তোমরা মানবজাতির সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করেছ এবং তাদের মধ্যে পাপ ছড়িয়েছ। তোমাদের সন্তান, দৈত্যরা, পৃথিবীকে ধ্বংস করেছে। তাদের ধ্বংস হয়ে গেছে এবং তোমাদেরও ধ্বংস হবে।”
৩. “মানুষের জন্য আমি চিরন্তন জীবন সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু তোমরা তাদের বিভ্রান্ত করেছ এবং পাপের পথে ঠেলে দিয়েছ।”
৪. “তোমাদের শাস্তি হবে কঠোর। তোমাদের নাম আর কখনো স্মরণ করা হবে না।”
অধ্যায় ১৬: ধার্মিকতার পুনর্জন্ম
১. ফেরেশতাদের পাপ এবং তাদের সন্তানদের ধ্বংসের ফলে পৃথিবী শুদ্ধ হতে শুরু করে। ঈশ্বর বলেন, “পাপের ফল অনিবার্য। যারা আমার আদেশ মানবে না, তারা ধ্বংস হবে।”
২. “তবে যারা ধার্মিক, তারা আমার আশীর্বাদ লাভ করবে। তাদের জন্য আমি একটি নতুন পৃথিবী প্রস্তুত করেছি, যেখানে পাপের কোনো স্থান নেই।”
৩. “এই পৃথিবী শুদ্ধ হবে এবং ধার্মিকদের জন্য এটি শান্তির স্থান হয়ে উঠবে।
৪. ধার্মিকদের জন্য পৃথিবী হবে এক নতুন আশীর্বাদপূর্ণ স্থান। তারা পৃথিবীতে দীর্ঘায়ু পাবে এবং তাদের জীবন শান্তি এবং সুখে পূর্ণ হবে।
৫. তাদের সন্তানরা হবে ধার্মিক, এবং তারা ঈশ্বরের পথে চলবে।
৬. ঈশ্বর বললেন, “তোমাদের জন্য আমি এমন একটি পৃথিবী সৃষ্টি করব, যেখানে কোনো পাপ, দুঃখ, বা কষ্ট থাকবে না।"
অধ্যায় ১৭: পৃথিবীর গোপন রহস্য
১. এনক বলেন, “ঈশ্বর আমাকে পৃথিবীর গোপন রহস্য দেখালেন। আমি দেখলাম কীভাবে আকাশ এবং পৃথিবী তৈরি হয়েছিল।”
২. “আমি দেখলাম নদী এবং সাগরের উৎস, পাহাড় এবং তাদের নিচে থাকা সম্পদ। আমি দেখলাম সূর্য এবং চাঁদের রহস্যময় পথ।”
৩. “এই সব ঈশ্বরের নির্দেশে সৃষ্টি হয়েছে এবং তার নিয়ন্ত্রণে চলছে।”
অধ্যায় ১৮: চূড়ান্ত বিচার
১. বিচার দিবসে, পাপীরা তাদের কর্মের জন্য চরম শাস্তি পাবে। ঈশ্বর তাদের সামনে সমস্ত সত্য উন্মোচন করবেন।
২. ধার্মিকরা পাপীদের পতন দেখবে এবং ঈশ্বরের মহিমা উপলব্ধি করবে।
৩. পৃথিবী থেকে পাপ পুরোপুরি মুছে যাবে, এবং চিরকালীন শান্তির রাজত্ব শুরু হবে।
অধ্যায় ১৯: ধার্মিকদের আশীর্বাদ
১. ঈশ্বর বলেন, “যারা আমাকে ভালোবাসে এবং আমার পথে চলে, তাদের জন্য আমি একটি চিরস্থায়ী আশীর্বাদ রেখেছি।”
২. “তোমাদের জীবন হবে সুখী এবং শান্তিপূর্ণ। আমি তোমাদের জন্য পবিত্রতা এবং আলো নিয়ে আসব।”
শেষ কথা
১. এনকের বই আমাদের শিক্ষা দেয়, কীভাবে ধার্মিকতার পথে চলতে হয় এবং পাপের পরিণতি কী হতে পারে।
২. এটি ঈশ্বরের মহিমা এবং দয়া সম্পর্কে একটি গভীর উপলব্ধি প্রদান করে।
৩. বইটি শেষ হয় ধার্মিকদের চূড়ান্ত পুরস্কার এবং পাপীদের ধ্বংসের কথা দিয়ে।